স্বাস্থ্য

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা | খেজুর খাওয়ার নিয়ম

খেজুর অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। খেজুর বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল সময়ে হয়ে থাকে। খেজুর লোভনীয় একটি ফল যেটা কিনা দেখতেলেই খেতে মন চায়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পছন্দের একটি খাবার ছিল খেজুর। আর এই খেজুর মহান আল্লাহ তায়ালার বড় একটি নিয়ামত। খেজুর অনেক ধরনের উপাদান, পুষ্টি ও ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আসলে খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা সঠিকভাবে জানিনা। সেটা জানার জন্যই ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু সঠিক তথ্য পাইনা।

আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মধ্যে আলোচনা করব খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা, খেজুর খাওয়ার নিয়ম, খেজুর কোথায় বেশি উৎপাদন হয়, খেজুর কত ধরনের কি কি, ইফতারে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভবতী অবস্থায় খেজুর খেলে কি হয়, এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি সম্পূর্ণ বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন।

১০০ গ্রাম খেজুরের পুষ্টির উপাদান – খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

পুষ্টির উপাদান
উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ২৭৭
শর্করা ৭৫.০৩ গ্রাম
চিনি ৬৩.৩৫ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ৮ গ্রাম
প্রোটিন ২.৪৫ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ০.৩৯ গ্রাম

 

খনিজের উপাদান
উপাদান পরিমাণ
ক্যালসিয়াম ৩৯ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম
লোহ ১.০২ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ০.২৬ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৬৫৬  মিলিগ্রাম
ফরফরাস ৬২ মিলিগ্রাম
জিংক ০.২৯ মিলিগ্রাম
পানি ২০.৫৩ মিলিগ্রাম

 

ভিটামিনের উপাদান
ভিটামিন পরিমান
ভিটামিন এ ১০ আন্তর্জাতিক ইউনিট
ভিটামিন সি ০.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ০.০৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ২.৭ মাইক্রগ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.১৬৫ মিলিগ্রাম
নায়াসিন (বি২) ১.২৭ মিলিগ্রাম
ফোলেট (বি৯) ১৯ মাইক্রগ্রাম

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

এখন আমরা আলোচনা করব খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা কে দুইটি অংশে বিভক্ত করেছি। ১ খেজুরের উপকারিতা ২ খেজুরের অপকারিতা।

খেজুরের উপকারিতা – Khejurer upokarita

খেজুর এমন একটি মূল্যবান ফল যা আপনি না খেলে তার গুনাগুন বুঝতে পারবেন না। বহু প্রাচীন কাল থেকে মানুষকে যে ফল খেয়ে তাদের শারীরিক চাহিদা সম্পন্ন করে থাকে। শরীরের রোগ বালাই দূর করা থেকে শুরু করে ক্ষুদা মেটাতে মানুষ খেজুর ফল খেয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শে খাবারের তালিকায় খেজুর ফল রাখতে বলেন। তাহলে চলুন জেনে নিয়ে যাও খেজুরের উপকারিতা গুলো কি কি।

আরও পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা | কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

আমরা যদি নিয়মিত খেজুর ফল খায় তাহলে আমাদের শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে তা বৃদ্ধি পায়। সহজে কোন রোগ বালাই আমাদের শরীরে আক্রমণ করতে পারে না। কারণ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সহ আরো নানান উপাদান। তাই আমরা যদি সুস্থ জীবন যাপন করতে চাই আমাদের সকলের উচিত খাবারের তালিকায় খেজুর ফলটি রাখা।

শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে

খেজুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ভিটামিন প্রোটিন যুক্ত ও নানা উপাদান। যা কিনা আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমরা কাজ করতে লাগলে অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই বা দুর্বল হয়ে পড়ি। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি। আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরে এই সকল কিছু ঘাটতি দূর হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য মানে জানি না। কোষ্ঠকাঠিন্য মূলত একটি রোগ। কোন মানুষের যদি স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে চার দিন পর পর মলত্যাগ করতে হয় এবং মল অনেক শক্ত হয় তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।

একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের দিনে একবার অথবা একদিন পরপর মলত্যাগ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি যদি খেজুর খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কারণ খেজুরে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের পেটের ভিতরে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ত্বক উজ্জ্বল করে

বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে বাহিরে চলাফেরা করতে অথবা রোদের মধ্যে কাজ করার সময় আমাদের শরীরের ত্বক পুড়ে যায় ও কালো হয়ে যায় এবং আমাদের দেখতে খারাপ লাগে। আপনি যদি আপনার শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নিয়মিত খেজুর ফল খান। কারণ খেজুরে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন সি যেটা আপনার শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে

খেজুর ফল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে থাকা আর মজবুত হয়। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম ও ফসফরাস যা আমাদের শরীরের হাড় বিশেষ ভাবে ভূমিকা পালন করে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুর খাওয়ার তুলনা হয়না। খেজুর খাওয়া ভালো আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং তার সাথে সাথে আপনার শুক্রাণু ঘন হবে ও শক্তিশালী হবে। এবং সহবাস করার সময় দীর্ঘায়িত হবে। তাই নিয়মিত খেজুর খান।

হজম শক্তি বাড়ায়

আপনার যদি খাবার হজম সমস্যা থাকে তাহলে আমি বলব আপনি নিয়মিত এখন থেকে খেজুর খাওয়া শুরু করুন তাহলে আস্তে আস্তে আপনার খাবার হজম করার সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। কারণ খেজুরে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

উপরে যে কয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম তা ছিল খেজুর খাওয়ার উপকারিতা। এখন আমরা আলোচনা করব খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা দ্বিতীয অংশ। ২ খেজুরের অপকারিতা।

খেজুরের অপকারিতা

প্রত্যেকটি খাবারের ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে খেজুরের ও ব্যতিক্রম নয়। খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো রয়েছে কিন্তু অপকারিতার থেকে উপকারিতা বেশি। চলুন জেনে নেয়া যাক খেজুরের অপকারিতা সম্পর্কে।

  • বেশি মাত্রায় খেজুর খেলে ওজন বেড়ে যায়
  • অতিরিক্ত খেজুর খেলে কিডনির সমস্যা হয়
  • অতিরিক্ত খেজুর খেলে এলার্জি ও ডায়রিয়া হয়
  • বেশি মাত্রায় খেয়ে ফেলে বদ হজম হয়

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি । মধু খাওয়ার নিয়ম

খেজুর খাওয়ার নিয়ম – খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রত্যেকটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করলে ভালো হয়। খেজুর আপনি প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীরের সারাদিন এনার্জি থাকবে। সবথেকে আরেক রকম ভাবে খেলে বেশি উপকৃত হবেন। এটি হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে ৮ থেকে ১০টি খেজুর টুকরা ভিজিয়ে রাখুন।

পরের দিন সকালে দেখবেন দুধটি অনেক মিষ্টি হয়ে গেছে এবং দুধে ভিজিয়ে রাখা খেজুরের পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে আপনি দুইটি উপকার পাবেন। ১ দুধের উপকারিতা। ২ খেজুরের উপকারিতা। এভাবে যদি আপনি নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন আপনি অনেক উপকৃত হবেন।

খেজুর কোথায় বেশি উৎপাদন হয়

খেজুর মূলত মরুভূমি অঞ্চলগুলোতে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। খেজুর গাছে পানি প্রয়োজন হয় না এই জন্য মরুভূমি অঞ্চলগুলোতে খেজুর খুব ভালো উৎপাদন হয়। পৃথিবীতে কয়েকটি দেশ রয়েছে যা খেজুর উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

  1. সৌদি আরব
  2. মিশর
  3. ইরান
  4. ইরাক
  5. আরব আমিরাত
  6. ওমান
  7. লিবিয়া
  8. পাকিস্তান
  9. সুদান

আরও পড়ুনঃ সহজে চিকন হওয়ার উপায় কি | চিকন হওয়ার খাদ্য তালিকা কি

খেজুর কত ধরনের কি কি ?

বর্তমান সময়ে আমাদের পৃথিবীতে অনেক ধরনের খেজুর আছে। সে গুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি খেজুরের নাম উল্লেখ করা হলো।

  1. আজওয়া
  2. মেডজুল
  3. মরিয়ম
  4. সুক্কারি
  5. খুদরি
  6. সাফাওয়ি
  7. মুসকানি
  8. বেরহি
  9. শালাবি
  10. আনবারা
  11. খালাস
  12. ওয়াসালি
  13. সাগি
  14. ডেইরি
  15. মাবরুম
  16. ওয়ান্নাহ
  17. সেফরি

খেজুর কত ধরনের কি কি

ইফতারে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আমরা যারা মুসলিম আছি তারা প্রত্যেক বছর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজান মাসে রোজা রাখি। এবং ইফতারের সময় খাবারের তালিকা খেজুর রাখি। তার মূল কারণ এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্নত।

এছাড়াও সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় আমাদের শরীর একদম দুর্বল হয়ে পড়ে শরীরে কোন শক্তি থাকে না। আর শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে আমরা ইফতারের সময় খেজুর খেয়ে থাকি।

গর্ভাবস্থায়ী অবস্থায় খেজুর খেলে কি হয়

একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হয় তখন তাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে থাকতে হয় এবং নিজের শরীরের অনেক যত্ন নিতে হয় এতে করে গর্ভবতী মহিলা ও পেটের ভিতরে থাকা বাচ্চা দুজনেই ভালো থাকে। গর্ভবতী অবস্থায় যদি কিছু খাওয়া হয় তাহলে বাচ্চার শারীরিক গঠন ও মেধা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত খেজুর খাওয়া উত্তম গর্ভবতী মহিলাদের।

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে সর্বশেষ কথা

আজকে আমরা এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করলাম খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আরো বিস্তারিত তথ্য। আমি আশা করছি আপনি খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা কি তাই সম্পন্ন ভালো করে বুঝতে পেরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *