স্বাস্থ্য

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | নিম পাতার ব্যবহার

আপনাকে যদি একটিও ঔষধি উপকারে গাছের নাম বলা হয় আপনার মাথা নিঃসন্দেহে নিম গাছের নামটি বলবেন। কারণ এই গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবকিছুই অত্যন্ত উপকারী ও ঔষধি একটি গাছ।

আবার আমাদের মত কিছু কিছু মানুষ হয়েছে এখন পর্যন্ত নিম গাছের ও পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তো চলুন জেনে নেয়া যাক আজকে নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে

নিম পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। নিম পাতা শব্দটি মাথায় আসলে শুধু এর উপকারিতা কি কি সেইসব মাথায় ঘুরপাক খায়।আজকে আমরা আলোচনা করব নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, নিম পাতার পুষ্টিগত উপাদান, নিম পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি, নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম, ও আরো ইত্যাদি সম্পর্কে।

নিম পাতা খাওয়া যায় এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। এটি আমরা নানান ভাবে ব্যবহার করে থাকি। তো চলুন প্রথমে জেনে নিয়ে যাক নিম পাতার পুষ্টিগত উপাদান কি কি।

নিম পাতার পুষ্টিগুন উপাদান কি কি

কমবেশি সকলেই নিম পাতার উপকারিতা কিছুটা হলেও জানি কিন্তু নিম পাতা তে কি পরিমাণ কি কি উপাদান রয়েছে সেটা কিন্তু জানিনা বড় বড় বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা নিম গাছ নিয়ে গবেষণা করে এর গুনাগুন বের করেছেন।এর প্রতিটি অংশ অনেক কার্যকরী যেমন: শিকড়, ছাল, ডাল, পাতা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা | কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি

নিম্নে নিম পাতার পুষ্টিগত উপাদান তুলে ধরা হলো:

নিম পাতার উপাদান পুষ্টিগুণের পরিমাণ
প্রোটিন ২.৪৮ গ্রাম
ফাইবার ৬.৭৭ গ্রাম
আয়রন ৫.৯৮ মিলি গ্রাম
ক্যালোরি ৪৫ মিলি গ্রাম
ফ্যাট ০.০০৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৭৫.৫ মিলি গ্রাম
ফসফরাস ২৩ মিলি গ্রাম
সোডিয়াম ২৫.২৭ মিলি গ্রাম
পটাশিয়াম ৮৮.৯ মিলি গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৪৪.৪৫ মিলি গ্রাম

উল্লেখিত প্রতি ৩৫ গ্রাম নিম পাতায় উপরের এই সব উপাদান থাকে। উপরে ছকটি থেকে আমরা জানতে পারলাম নিম পাতার পুষ্টিগুণ উপাদান সম্পর্কে।

নিম পাতার উপকারিতা – Neem Patar Upokarita

নিম পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে। যেকোনো রোগের ওষুধ এই নিম গাছের মধ্যে রয়েছে। অনেকে আবার নিম গাছকে ম্যাজিক গাছ বলে থাকেন। কারণ নিমের পাতা ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

প্রাচীনকাল থেকে নিম গাছের ব্যবহার করে আসতেছে মানুষ। আগের যুগের বড় বড় ডাক্তার ছিল না ছিল শুধু কবিরাজ। আর এই কবিরাজ গুলোই তখনকার সময়ে মানুষের রোগব্যাধি হলে বিভিন্নভাবে নিম গাছের পাতা ব্যবহার ও খাবার পরামর্শ দিতেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক আমরা নিমের পাতা থেকে কি কি উপকার পেয়ে থাকি।

১ রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে

আমাদের দেহে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস এটি হচ্ছে আমাদের দেহের রক্ত। সে রক্ত যদি পরিষ্কার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। তাই আমরা যদি নিয়মিত নিম পাতার রস খায় তাহলে আমাদের শরীরের রক্তের সাথে যদি কোন দূষিত পদার্থ থাকে তা মলত্যাগের সময় বের হয়ে যায় এবং শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২ ওজন কমাতে সাহায্য করে

আমাদের শরীরের ওজন কমাতে নিমপাতা অনেক উপকারী একটি জিনিস। আমরা দৈনিক জীবনে খাবারের সাথে অনেক কিছু খেয়ে থাকি যেগুলো চর্বি যুক্ত খাবার যার কারণে আমাদের শরীরের ওজন খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আমাদের সঠিক উপায় জানা নাই কিভাবে শরীরের ওজন কমানো যায়। এক্ষেত্রে সঠিক ও সহজ উপায়ে আপনি যদি নিয়মিত নিমের পাতার রস করে খান তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেও আপনার ওজন কমানো সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ সহজে চিকন হওয়ার উপায় কি | চিকন হওয়ার খাদ্য তালিকা কি

৩ মুখের ও দাঁতের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে

আমাদের মধ্য অনেকেই আছে যাদের মুখের ভিতরে এক ধরনের ঘা হয় আবার অনেকের দাঁতের গোড়ায় ব্যথা হয় এবং অল্প বয়সে দাঁত পড়ে যায়। এই সকল সমস্যার সমাধান হচ্ছে নিমগাছ। আপনি যদি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নিমের কচি ডাল দিয়ে ব্রাশ করেন তাহলে আপনার দাঁত আগে থেকে অনেক মজবুত হবে এবং মুখে থাকা ঘা খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।বিশেষ করে গ্রামের মানুষ এইটার ব্যবহার খুব ভালোভাবে জানে তাই তাদের মুখের দাত অনেক ভালো থাকে।

নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজে কিভাবে

 

৪ ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা

মানুষের ত্বকের যত্নের শেষ নেই। কারণ বর্তমান সময়ের সাথে সাথে মানুষ নিজেকে সুন্দর রাখতে ব্যস্ত। আর এর মাঝে অনেক কিছু নিজেদের ত্বকে ব্যবহার করে  বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে যেমন: ব্রণ, পিম্পল, ত্বক পুড়ে যাওয়া। 

এসব সমস্যা দূর করতে আপনি নিমের পাতা ব্যবহার করতে পারেন। মানুষ কাল আগে থেকে নিম পাতা ভিজিয়ে তা বাটনা দিয়ে বেটে ত্বকের উপর লাগিয়ে দেই এতে করে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কারণ নিমের পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও সব সমস্যার সমাধান করতে অনেক সাহায্য করে।

৫ চুলের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা

মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে চুল। সে চুল যদি অল্প বয়সে পড়ে যায় তাহলে মানুষের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।বর্তমান সময় মানুষের চুল পড়া কঠিনতম একটি সমস্যা। এর সাথে দেখা দেয় মাথায় খুশকি। যার কারণে আমাদের মাথাতে অনেক চুলকানি শুরু হয়।

এসব থেকে বাঁচতে আপনি যদি নিয়মিত নিমের পাতা আপনার মাথাতে চুলের মধ্যে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চুলের গোড়া অনেক শক্ত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাবে আর এর সাথে খুশকি দূর হয়ে যাবে। কারণ নিমের পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যার ফলে চুলে গোড়া শক্ত করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

৬ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে রাখে

মানবদেহের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমের পাতা অনেক ভাবে ভূমিকা রাখে। সাধারণত মানুষের দেহের রক্তে সরকার পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিক হয়। ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৬.৫। 

নিমের পাতাতে প্রচুর পরিমাণ হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে নিয়মিত নিম পাতার রস খেতে হবে।

৭ লিভার বা পাকস্থলী সুস্থ রাখে

মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে লিভার বা পাকস্থলী। আমরা যেসব খাবার খাইস এসব খাবার পাকস্থলীতে গিয়ে জমা হয়। এবং সেখান থেকে খাবার গুলো হজম হয়ে মানবদেহী শক্তি যোগায়। আর এই পাকস্থলী যদি সুস্থ বা ঠিক না থাকে তাহলে খাবার হজমে সমস্যা হয় এবং এতে করে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

তাই আমাদের পাকস্থলীতে সুস্থ রাখতে ভালোভাবে নজর দিতে হবে। এতে করে নিমের পাতা অনেক কার্যকরী সকালে খালি পেটে নিমের পাতা খেলে পাকস্থলীর জন্য অনেক উপকারী। এটি পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

উপরে উল্লেখিত মূল এই সাতটি বিষয় ছিল নিম পাতার উপকারিতা। এছাড়াও আরো অনেক ছোট ছোট উপকারিতা রয়েছে।

নিমের পাতার অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি নিম পাতা উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো রয়েছে। কিন্তু নিম পাতার উপকারিতা থেকে অপকারিতা খুব কম।

নিমের পাতা রস বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেললে এটি আপনার পাকস্থলীর জন্য অনেক ক্ষতি করে কারণ এটি খেতে অনেক তিতা এতে করে বমি হতে পারে।

আবার যারা গর্ভবতী মহিলা রয়েছে তাদের জন্য নিম পাতার রস খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ তাদের গর্ভে রয়েছে একটি বাচ্চা এবং গর্ভবতী মহিলাদের খাবারটি খাবে সেই খাবারটি গর্ভে থাকা বাচ্চাটিও খাবে। আর গর্ভবতী অবস্থায় নিম পাতার রস না খাওয়াই উত্তম।

নিম পাতার ব্যবহার – Neem patar Bebohar

ইতিমধ্যে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা জানবো নিম পাতার ব্যবহার। তো চলুন জেনে নেয়া যাক।

১. একটি পাত্রে পানি ও কয়েকটি নিমের পাতা সহ পানিটি গরম করে নিন। এবং সে পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে করে আপনার শরীরে থাকা দুর্গন্ধ ও চুলকানি থাকলে অনেকটা ভালো হয়ে যাবে। এ পদ্ধতি স্ক্রিনের জন্য অনেক উপকারী।

২. কাটা ও পোড়া জায়গায় নিমের পাতার রস লাগিয়ে দিন অল্প সময়ের মধ্যে উপকৃত হবেন।

৩. নিম পাতার রস পানিতে মিশেছে সেই পানি দিয়ে ফেসওয়াশ করুন এতে করে আপনার স্কিন দিন দিন উজ্জ্বল হতে থাকবে।

৪. প্রতিদিন ২-৩ টি নিমের পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খান এতে করে আপনার পাকস্থলী পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

৫. আপনি যদি নিমের পাতার রস খেতে না পারেন তিতা লাগে। তাহলে আপনি সকালে অথবা বিকালে চায়ের সাথে নিমের পাতার রস মিশিয়ে খান।

নিমের পাতা কিভাবে মুখে মাখে

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম – নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতা মূলত খালি পেটে খাওয়া উত্তম। তবে সেটা নিয়ম মেনে খেতে হবে দুই থেকে তিনটি। তবে নিম পাতা খেতে যদি আপনার তিতা লাগে। তাহলে আপনি নিমপাতা গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান। অথবা মিষ্টি জাতীয় কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খান যেমন মিষ্টি চিনি বা মধু।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি । মধু খাওয়ার নিয়ম

এভাবে খেলেও আপনি সম্পূর্ণ নিম পাতার উপকারিতা পাবেন। অনেকে তো আবার আর একটা পদ্ধতিতে খাই সেটা হচ্ছে নিম পাতা বেটে নিয়ে সেটা ছোট ছোট ট্যাবলেট এর মত আকার দিয়ে রোদে শুকিয়ে পরে পানির সাথে খাই। আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে নিম পাতা খাওয়ার।

নিম পাতার উপকারিতা নিয়ে সর্বশেষ কথা

আশা করি আজকের পোস্টটি সাহায্যে আপনারা সবাই নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবং আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। যদি আমাদের পোস্টে আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং কিছু জানা থাকলে কমেন্ট করবেন।

আমি আপনাদের কাছে একটি পরামর্শ দিব আপনারা প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি নিমের পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খান এতে করে অনেক উপকৃত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *