কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা | কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি
আসসালামু আলাইকুম সবাই ভাল আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আলোচনা মূল জিনিস হচ্ছে “কিসমিস” । আর এটি সবার জনপ্রিয় একটি ফল। প্রায় সারা বিশ্বে এটির সুনাম ও গুণগান রয়েছে। মূলত আঙ্গুর ফল থেকে কিসমিস তৈরি হয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না। আমরা আজকে কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা,কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, ১০০ গ্রাম কিসমিসের পুষ্টিগুণ, কিসমিস কত প্রকার ও কি কি, সেক্সে কিসমিসের উপকারিতা ও ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে পারবেন।
সর্বপ্রথম আমরা জেনে নেব কিসমিসে পুষ্টিগুণ ও উপাদান সম্পর্কে
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা – ১০০ গ্রাম কিসমিসের পুষ্টিগুণ
উপাদান | পরিমাণ |
ক্যালরি | ২৯৯ |
ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম |
কার্বো-হাইড্রেট | ৭৯ গ্রাম |
প্রোটিন | ৩.১ গ্রাম |
সোডিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম৭৪৯ মিলিগ্রাম | ৭৪৯ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮% |
ক্যালসিয়াম | ০.০৫% |
ভিটামিন সি | ৩% |
ভিটামিন বি৬ | ১০% |
আয়রন | ১০% |
এছাড়াও আরো অনেক উপাদান থাকে কিসমিসের মধ্যে কিন্তু এ কয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
এখন কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য আমরা দুটি অংশে বিভক্ত করেছি। ১ কিসমিসের উপকারিতা, ২ কিসমিসের অপকারিতা।
আরও পড়ুনঃ সহজে চিকন হওয়ার উপায় কি | চিকন হওয়ার খাদ্য তালিকা কি
কিসমিস এর উপকারিতা – Kismis er upokarita
কিসমিসের এসে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। জেনে নেয়া যাক কিসমিস আমাদের শরীরে কি কি উপকার করে।
১ ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
সবাই যে ওজন কমাতে চাই বিষয়টা এরকম না। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের ওজন কম। তারা যাচ্ছেন শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে। তারা নিয়মিত কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া শুরু করেন খুব অল্প দিনের মধ্যেও আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি করবে। কারণ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ, এনার্জিতে ভরপুর।
২ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কিসমিসের উপকারিতা
আমাদের শরীরে বড় একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে খাবার হজমের প্রক্রিয়া। খাবার যদি সঠিকভাবে হজম না হয় তাহলে কিন্তু আপনার শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন পেটের ভিতর গ্যাস সৃষ্টি হয়। আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এই কিসমিস।
৩ ঘুম ভালো হওয়ার জন্য কিসমিসের উপকারিতা
আমাদের দেহের ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি একটি অংশ। পরিপূর্ণভাবে ঘুম না হলে কিন্তু আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ও মন কোনটি ভালো থাকে না। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই টেনশন বা অন্য কোনো কারণে দিনের বা রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে পারিনা এ কারণে বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকি।
কিন্তু আমাদের অজান্তে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে কিছু পরিমাণ কিসমিস খেয়ে ঘুমান আপনার ঘুম অনেক ভালো হবে তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে।
৪ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কিসমিসের উপকারিতা
আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা বা স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া রক্ত চাপ বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে এমনকি মানুষ মারা পর্যন্ত যায়। কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম। যা মানুষের রক্তচাপ কমাতে বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
৫ হাড় শক্ত করতে কিসমিসের উপকারিতা
আমাদের শরীরের গঠন ধরে রাখতে ও শরীর শক্তিশালী রাখতে কিসমিস খাওয়ার তুলনা হয়না। কারণ কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা কিনা আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি হাড় ও মুখের দাঁত সহ আরো বিভিন্ন অংশ অনেক মজবুত করে। এছাড়াও ক্ষয় যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
৬ রোগ প্রতিরোধ করতে কিসমিসের উপকারিতা
বিভিন্ন সময়ে আমরা কারণে-অকারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এটা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। কিসমিসে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ও ভিটামিন সহ আরো নানা শক্তিশালী উপাদান। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যেকোনো রোগ হওয়া থেকে মুক্তি দেয়।
৭ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কিসমিসের উপকারিতা
অনেকের অল্প বয়সে চোখে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে চোখে কম দেখতে শুরু করে। আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়বে এবং কখনো দৃষ্টি শক্তি কমবে না। কারণ কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন এ যেটা কিনা মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও অনেক কার্যকর। এছাড়াও আরো হলো।
৮ হার্ট ভালো রাখতে কিসমিস সাহায্য করে
আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাই যে মানুষ হার্ট অ্যাটাক খুব অল্প বয়সেই মৃত্যুবরণ করে। এ যেন সকল কিছু বিবেচনা করে আটকে ভালো রাখার উপায় গুলো জানতে হবে। এর সহজ একটি উপায় হচ্ছে ভিজিয়ে রাখা কিসমিসের পানি পান করা। এতে করে আপনার হার্ট ভালো থাকবে।
উপরে যে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান তাহলে অবশ্যই এই সকল বিষয়ে উপকৃত হবেন। এই ৮টি বিষয় ছাড়াও আরো কিসমিসের অনেক গুনাগুন রয়েছে
এবার আমরা আরও জানব কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা মধ্য ২ পাঠ কিসমিসের অপকারিতা নিয়ে।
কিসমিসের অপকারিতা – কিসমিস খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
প্রত্যেকটা জিনিসের ভালো দিক এবং খারাপ দিক রয়েছে কিসমিসের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো রয়েছে। তবে উপকারিতা বেশি আর অপকারিতা খুব কম চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১ এলার্জি বা চুলকানি সমস্যা
আপনি যদি স্বাভাবিক পরিমাণ কিসমিস খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার তেমন কোন সমস্যা হবে না। আর আপনি যদি অতিরিক্ত মাত্রায় দৈনিক কিসমিস খান তাহলে আপনার এলার্জি বা চুলকানি হতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই শরীরে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা খুব অল্প পরিমাণ কিসমিস খাবেন।
২ ডায়রিয়ার সমস্যা
আপনার যদি পেট খারাপের সমস্যা থেকে থাকে অল্প কিছুতেই পেট খারাপ করে তাহলে আপনার কিসমিস না খাওয়াটাই ভালো।
৩ ডায়াবেটিস রোগ সমস্যা
কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় ফল এটা আমরা সবাই জানি। আর এটাও জানি যে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি খাওয়ায় একদমই ঠিক না। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারা কিসমিস খাবেন না।
আরও পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা | লেবু খাওয়ার সঠিক নিয়ম ২০২৩
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা – কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি ?
কিসমিস খাওয়ার সুন্দর একটি নিয়ম রয়েছে যেটা মেনে খেলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। কিসমিস সাধারণত অনেক কয়টি ভাবে খাওয়া যায় কিন্তু আপনি যদি ভিজিয়ে খান তবে বেশি উপকৃত হবেন।
রাতে ঘুমানোর আগে এক থেকে দুই মুঠো কিসমিস বিশুদ্ধ পানিতে একটি ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। আর পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে সেগুলো ভিজিয়ে রাখা কিসমিস খান এবং কিসমিস ভেজানো পানি ও খেতে পারেন এতে করে আপনার হার্টের জন্য অনেক উপকার হবে।
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা – সেক্সে কিসমিসের উপকারিতা
সেক্সের ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিসমিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। আমাদের মধ্যে যারা পুরুষ রয়েছে তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যখন সহবাস করে তখন তাদের অল্পতেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ও বীর্য তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়।
এছাড়াও বড় সমস্যা টি হচ্ছে ছেলেদের ভিতর থাকা শুক্রাণু শক্তিশালী হয় এই কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে। আপনি যদি সেক্স করতে দুর্বল হন তাহলে এটি অনেক বড় একটি সমস্যা। তাই নিয়মিত কিসমিস খান ও নিজের সেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।
কিসমিসের ব্যবহার কি কি
- মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে
- খাবার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে
- লাচ্ছা, সেমাই, পায়েস, ফিরনি তৈরিতে
- পোলাও কোরমা খাবার তৈরিতে
- সকালে নাস্তায় খাবারের সাথে
কিসমিস কত প্রকার ও কি কি
আমাদের এই বিশাল পৃথিবীতে কত ধরনের ফলমূল রয়েছে তা এখনো আমরা জানি না। পৃথিবীতে এখন বর্তমান কিসমিস ৬ প্রকার পাওয়া গেছে।
- কালো কিসমিস
- গোল্ডেন ডিসপ্লেস
- লাল কিসমিস
- সবুজ কিসমিস
- কুরেন্ট কিসমিস
- সুলতানা কিসমিস
কিসমিস কিভাবে তৈরি হয় ?
আমরা সবাই কমবেশি জানি যে আঙ্গুর ফল থেকে কিসমিস তৈরি হয়। কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় সে আসল প্রক্রিয়াটা জানিনা। আসল প্রক্রিয়াটা হচ্ছে ভালো মানের আঙ্গুর ফল এক কেজি পরিমাণে ২ লিটার পানিতে ভিজে একটি পাত্রের উপর করে চুলায় বা অন্য কোন মাধ্যমে তাপ দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা | দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়
তখন না পানিটা ভালোভাবে গরম হচ্ছে বুদবুদ আসে। এরপর ছাকনি দিয়ে সেই সব আঙ্গুর ফল ছেঁকে নিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ের উপরে করে রোদে শুকাতে দিতে হবে টানা ২ থেকে ৩ দিন। এরপর তৈরি হয়ে যাবে মিষ্টি ও সুস্বাদু পুষ্টিযুক্ত কিসমিস।
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে সর্বশেষ কথাঃ
এই আর্টিকেলের মধ্যেও কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়টি আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আজকের পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন।
FAQ
[sp_easyaccordion id=”4863″]