গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় | প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার পদ্ধতি
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কি কি অনেক মেয়েরা জানে না। আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে আজকে পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত জানা জরুরী। প্রতিটি মেয়ের সবথেকে বড় স্বপ্ন সে একদিন মা হবে। এজন্য গর্ভবতী হওয়ার আগ থেকে বাচ্চা কোলে আসা পর্যন্ত সব বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জানতে হবে। সাধারণত আমরা যারা মেয়ে আছি তারা কিছু লক্ষণের উপর ভিত্তি করে গর্ভবতী সেটা নির্ধারণ করি।
যখন কোন মেয়ে গর্ভবতী হয় তার শারীরিক কিছু আকার ইঙ্গিতে সেটা প্রকাশ পায়। তবে বিবাহিত কিছু মেয়েদের যদি কোন কারণ নেই পিরিয়ড হতে একটু দেরি হয় তাহলে ওই মেয়ে মনে করে তিনি গর্ভবতী বা প্রেগন্যান্ট। আসলে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কোন শারীরিক কারণেই মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বিবাহিত মহিলাদের এক মাসের মধ্যে হওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না। কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ আগে কিছুই বোঝা যায় না। তারপর থেকে ধীরে ধীরে গর্ভবতী লক্ষণ সবকিছু ভালো করে বোঝা যায়। আজকে আমরা আলোচনা করব গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায় এবং প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার পদ্ধতি এসব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তো চলুন শুরু করা যাক।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ – Pregnant Hoyar Lokkhon
১. পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হওয়া
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বোঝার সবথেকে বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। বিবাহিত মহিলা যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমত আপনার মাসিক বন্ধ হয়ে যাবে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিবাহিত মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে ও পিরিয়ড বা মাসিক মিস হয় এতে করে ধরে নেই সে হয়তো প্রেগন্যান্ট। তবে সতর্কতা থাকা ভালো তাই পিরিয়ড বন্ধ হলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন অথবা ভালো কোন ডাক্তারের কাছে গিয়ে সুনিশ্চিত হন।
আরও পড়ুনঃ মোটা হওয়ার উপায় | সাত দিনে মোটা হওয়ার টিপস
২. বমি বমি ভাব হওয়া
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যেও আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে বমি বমি ভাব হওয়া। এই মাধ্যমটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। যখন কোন মেয়ের পেটের ভিতর থেকে বমি বমি ভাব হয় তখন ধরে নেয়া হয় এটা গর্ভবর্তী হওয়ার লক্ষণ। এটা সাধারণত এক মাস হওয়ার পরে লক্ষণটি বোঝা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে দূর থেকে তিন সপ্তাহ মধ্যেও দেখা যায়।
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব হয়
যখন কোন মেয়ে গর্ভবতী হয় তখন তার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। কারণ তখন শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায় ও মেয়েদের জরায়ু ফুলে যায় এবং মূত্রাশয়ে প্রসাবের জন্য চাপ দেয় পেটের ভিতরে বেশিক্ষণ তরল পদার্থ ধরে রাখতে পারেনা যার কারণে বারবার প্রস্রাব করতে হয়।
এ লক্ষণটি দেখা দেওয়ায় সঠিক সময় নেই এটা যে কোন সময় হতে পারে বিশেষ করে ৬ সপ্তাহ অতিক্রম হওয়ার পরে লক্ষণটি বেশি দেখা যায়।
৪. শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
যদি দেখেন আপনার শরীরে তাপমাত্রা আগের থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে ধরে নেবেন এটি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। আবার অনেকে এটা মনে করবেন না যে জ্বর আসার কারণে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজন হলে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সুনিশ্চিত হবেন
৫. স্তনের পরিবর্তন হয়
মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার পরে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্তনের পরিবর্তন। আগের তুলনায় অনেক ফুলে যায় একটু একটু ব্যাথা হয় ও স্তনে দুধ আসতে শুরু করে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
আরও পড়ুনঃ প্রোটিন জাতীয় খাবার কি কি | প্রোটিনের অভাবে কি রোগ হয় ?
৬. পেট ফুলে যায়
আগের থেকে পেট ফুলে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। শরীরের হরমোন এর কারণে পেট ফুলে যায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় থাকা বাচ্চা দিনদিন একটু একটু করে বড় হতে থাকে যার কারণে পেটের আকার টা বড় হতে থাকে। আর যেকোনো পোশাক পরতে লাগলে ছোট মনে হয়।
৭. সাদা স্রাব বের হয়
স্বামী স্ত্রীর সহবাসের সময় স্বামীর ডিম্বাণু তার স্ত্রীর সাথে জড়িয়ে নেয় যার কারণে সমান পরিমাণ রক্ত পড়া থেকে মাসিকের মত ব্যথা হয়। একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হল সাদা স্রাবে গন্ধ যোনিতে জ্বালা পোড়া করলে বুঝবেন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে যখন দ্রুত ডাক্তারের চিকিৎসা নেন।
৮. খাবার খেতে না চাওয়া
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খাবারে অরুচি হওয়া। এটি সাধারণত শরীরের হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। জিহ্বার স্বাদ পরিবর্তন হয়। কোন খাবার খেতে ইচ্ছা করে না। যদিও কোন খাবার মুখে নেই সে খাবারটি টক টক স্বাদ অনুভব হয়।
৯. হঠাৎ মন মেজাজ খারাপ হওয়া
যখন কোন মহিলা গর্ভবতী হয় তখন তার মন মেজাজ দুটাই পরিবর্তন হয় বেশিরভাগ সময় মন খারাপ হওয়ার বদমাশ মেজাজ হয়ে থাকে। এটি হয় মূলত হরমোনের কারণে ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটার এর কারণে হয়। যার কারনে যখন তখন মন খারাপ ও খিটখিটে মেজাজ হয়ে থাকে।
এ কয়েকটি হল মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। আমাদের সমাজে কিছু কিছু মেয়ে আছে তারা আসলেই গর্ভবতী হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে পারে না এবং কারো কাছে লজ্জা শরমের বলতেও পারে না। তাদের মধ্যে যদি এই কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বুঝে নিবেন সে মেয়েটি গর্ভবতী রয়েছে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার পদ্ধতি
আপনি এখন বাসায় বসে খুব সহজে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। তার জন্য আপনাকে যেকোন ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি টেস্টকিট কিনে আনতে হবে। এরপর আপনাকে আপনার নিজের সকাল বেলার প্রস্রাব কোন পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর ২ ফোঁটা প্রস্রাব সেই টেস্ট কিট এর উপর দিন। এরপর যদি টেস্ট কিটের রং নীল হয় বা দুই দাগ অতিক্রম করে তাহলে বুঝবেন আপনি প্রেগন্যান্ট।
আপনার যদি পিরিয়ড মিস হয় তার এক সপ্তাহ পরে প্রেগনেন্সি পরীক্ষাটি করুন।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাবার তালিকা
যখন কোন মেয়ে গর্ভবতী হবে তখন তাকে সাবধানতার সাথে চলাফেরা করতে হবে এবং খাবার খেতে হবে। তাহলে গর্ভবতী মেয়ে ও গর্ভে থাকা বাচ্চা দুটোই সুস্থ থাকবে। তো চলুন জেনে নেই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাবারের তালিকাঃ
- ভাত ও রুটি
- মাছ মাংস
- শাকসবজি
- পানি ও দুধ
- ডিম
- ফলমূল
- বাদাম
- শস্যদানা
গর্ভবতী মহিলাদের কোন খাবার খাওয়া যাবে না
- বিস্কুট
- কেক
- মাখন
- ঘী
- ক্রিম
- চকলেট
- আইসক্রিম
- ভাজাপোড়া
- চিপস
- পুডিং
- কোমল পানীয়
- কামরাঙ্গা
- আনারস
- পেঁপে
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি | Foods with vitamin D
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ নিয়ে সর্বশেষ কথা
একজন গর্ভবতী মায়ের দায়িত্ব তার গর্ভে থাকা বাচ্চাকে সুস্থ সবল রাখা। তাই এসব লক্ষণগুলো জেনে রাখুন নিজে সুস্থ থাকুন ও গর্ভে থাকা বাচ্চাকে নিরাপদে রাখুন। আজকের আর্টিকেল মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি। আশা করছি আজকের এই পোস্ট আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে যদি কিছু জানা থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আল্লাহ হাফেজ।